ক্যাম্পের আশপাশের পাহাড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ১২ গ্রুপ

সরওয়ার আজম মানিক, কক্সবাজার ◑
কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবিরের পার্শ্ববর্তী পাহাড়গুলো এখন মিয়ানমার থেকে আসা এই জনগোষ্ঠীর সন্ত্রাসীদের নিরাপদ ডেরায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এসব পাহাড় ঘিরে সক্রিয় রয়েছে অন্তত ১২টি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ। তারা খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ নানা অপরাধে যুক্ত। রোহিঙ্গারাসহ টেকনাফের স্থানীয়রাও নির্যাতিত হচ্ছে এসব সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে।

গতকাল সোমবারও টেকনাফে র‌্যাব-বিজিবির সঙ্গে পৃথক বন্দুকযুদ্ধে ৮ রোহিঙ্গা নিহত হয়। এর মধ্যে উপজেলার মোচনি ও জাদিমোরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড়ে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ৭ জন। তারা সবাই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ জাকির বাহিনীর সদস্য বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে একই বাহিনীর ইলিয়াস নামে আরেক সদস্য মারা গিয়েছিল।

স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে উখিয়া টেকনাফের ৩২টি আশ্রয় শিবিরে নতুন-পুরাতন মিলে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। এর মধ্যে টেকনাফে রয়েছে ৭টি আর উখিয়ায় ২৫টি রোহিঙ্গা শিবির। বিশেষ করে টেকনাফের শিবিরগুলোর পাশে রয়েছে উঁচু উঁচু দুর্গম পাহাড়। ফলে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ডেরা হিসেবে এসব পাহাড়কে বেছে নিয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো।

রোহিঙ্গা প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর রয়েছে ক্যাম্পের আশপাশের পাহাড়গুলোয় ১২ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এসব গ্রুপ রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে অপহরণ, চাঁদাবাজি করছে। মাঝে মধ্যে তাদের অপহরণ আর চাঁদাবাজির শিকার হন বাংলাদেশের স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরাও।’

টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা আবুল কাশেম, ফরিদুল আলম ও মো. কাশেম জানান, সেখানকার ২৬ ও ২৭ নম্বর ক্যাম্পের পাশে যে পাহাড় রয়েছে, সেখানে অনেকগুলো সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। এ সন্ত্রাসীরা মাঝে মাঝেই শিবিরে এসে রোহিঙ্গাদের ধরে নিয়ে যায়। এর পর অসহায় রোহিঙ্গারা মুক্তিপণ দিয়ে তাদের কাছ থেকে ছাড়া পান।

লেদা ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা আব্দুল মোতালেব জানান, গত এক মাসে এসব গ্রুপ তাদের ক্যাম্প থেকে অন্তত ২৫ জনকে অপহরণ করে। পরে তাদের মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনা হয়। এ ক্যাম্পেরই আরেক বাসিন্দা নুরুল করিম বলেন, এসব সন্ত্রাসী আমাদের জাতির কলঙ্ক। আমরা চাই এদের বাংলাদেশ সরকার শাস্তির আওতায় নিয়ে আসুক।

বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) ফোরকান আহমেদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য মারা যাওয়ার ঘটনাকে তারা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবে না। প্রতিশোধ নিতে তারা আরও হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। তাই এ ব্যাপারে আইন প্রয়োাগকারী সংস্থাগুলোকে কৌশল অবলম্বন করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের গ্রুপ সক্রিয় থাকার খবরটি আমাদের কাছেও রয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় পুলিশ সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। রোহিঙ্গা হোক কিংবা স্থানীয় সন্ত্রাসী হোক কোনো ছাড় দেবে না পুলিশ। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে সব সময় পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।’ একই কথা বলেছেন টেকনাফের র‌্যাব ১৫-এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদও।